শফিকুল ইসলামগুলশানের রেস্তোরাঁয় জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত পঞ্চম হামলাকারীর পরিচয় জানা গেছে। তাঁর নাম শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল (২৫), বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডার বাড়ি ইউনিয়নের কৈয়াগাড়ি গ্রামে। পরিবারের দাবি, শফিকুল ছয় মাস আগে সর্বশেষ বাড়ি এসেছিলেন। দীর্ঘদিনের জন্য ‘তাবলিগের চিল্লায় যাচ্ছি’ বলে বাড়ি থেকে বিদায় দেন।
বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) গাজিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বলের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার বাবা-ভাইকে থানায় আনা হয়েছে।
শনিবার সকালে জিম্মি উদ্ধার অভিযানের পর হামলাকারীর হিসেবে যে পাঁচটি লাশের ছবি পুলিশ গণমাধ্যমকে দিয়েছিল, তাদের মধ্যে শফিকুলের ছবিও ছিল। এ ছাড়া আইএস (ইসলামিক স্টেট) হামলার দায় স্বীকার করে হামলাকারী হিসেবে যে পাঁচজনের ছবি প্রচার করেছে, তাতেও শফিকুলের ছবি ছিল।
পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার বিকেলে এএসপি গাজিউর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল শফিকুলের বাড়ি যায়। শফিকুল সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা জানান, সে ঢাকার আশুলিয়ায় চাকরি করেন, সেখানে আছেন। পরে ঘরের ভেতর বাঁধিয়ে রাখা ছবির সঙ্গে পুলিশের কাছে থাকা ছবির মিল পাওয়া যায়। তখন পুলিশ লাশের ছবি দেখায়। শফিকুলের বাবা ও বড় ভাই ছবি শনাক্ত করেন। এরপর পুলিশ বাবা ও ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্ধ্যায় ধুনট থানায় নিয়ে আসে।
শফিকুলের বাবা বদিউজ্জামান (৫৫) ও বড় ভাই আসাদুল ইসলাম (৩২) দুজনই কৃষিশ্রমিক। বদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামের লোকজন বলাবলি করছিল যে টেলিভিশনে শফিকুলের ছবি দেখাচ্ছে, তিনি ঢাকায় জঙ্গি হামলা করতে গিয়ে মারা গেছেন। কিন্তু তিনি তা বিশ্বাস করেননি। পুলিশ তাঁদের বাড়িতে যাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হন।
ভাই আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই শফিকুল ধুনটের গোঁসাইবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও গোসাইবাড়ি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হন। পরে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বছর দুয়েক আগে তিনি ঢাকার আশুলিয়া থানার শাজাহান মার্কেট এলাকায় মাদারী মাতব্বর কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেন। সর্বশেষ ডিসেম্বর শফিকুল বাড়িতে আসেন। বেশ কিছুদিনের জন্য তাবলিগ জামাতের চিল্লায় যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বিদায় নেন। এরপর শফিকুল আর বাড়ির কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি।
গুলশানের রেস্তোরাঁয় জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত সন্দেহভাজন হামলাকারীদের মধ্যে এর আগে চারজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের একজন খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েলের বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ব্রিকুষ্টিয়া গ্রামে। তিনি ডিহিগ্রাম ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০১৫ সালে আলিম (এইচএসসি সমমান) পাস করে ফাজিল শ্রেণিতে ভর্তি হন। তাঁর মা পেয়ারা বেগম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, এক বছর ধরে খায়রুল নিখোঁজ ছিলেন। তাঁর বোনের দাবি, তাঁরা জানতেন, তাঁর ভাই ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এরপর আর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি।
এর বাইরে বাকি যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, তাঁরা হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকা থেকে ও লেভেল পাস করা মীর সামেহ মোবাশ্বের ও মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিবরাস ইসলাম। এঁরা সবাই ঢাকার উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। এঁদের মধ্যে রোহান গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে এবং মোবাশ্বের ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে তাঁদের পরিবার তখন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।
গত শনিবার এই পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট) দাবি করেছে, এঁরা আইএসের সদস্য। এঁরাই শুক্রবার রাতে গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। আইএসের এই দাবি প্রচার করে তাদের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক নিউজ। সেটা পরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ প্রচার করে। আইএসের ওই বার্তায় এই পাঁচজনের বলা হয়েছিল আবু উমায়ের, আবু সালমা, আবু রাহিক, আবু মুসলিম ও আবু মুহারিব।
একই দিন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নিহত পাঁচজনের লাশের ছবি গণমাধ্যমে পাঠিয়ে বলেছিল তাঁদের নাম বলা হয়েছিল আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। কিন্তু বাস্তবে এঁদের কারও নাম মেলেনি। আর হামলাকারী জঙ্গি হিসেবে যে পাঁচটি লাশের ছবি পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ওই রেস্তোরাঁর কর্মী সাইফুলের ছবিও ছিল। রোহানের লাশের ছবি পাঠানো হয়নি ওই দিন।
নামের এই অমিলের বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিরা সব সময় ছদ্মনাম ব্যবহার করে থাকে।
 
Top