হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ হাকীম আখতার রহ.

বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ما أسفل من الكعبين من الإزار ففي النار
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের টাখনু যতটুকু ঢেকে থাকবে ততটুকু জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। চাই তা জুব্বা দিয়েই ঢাকুক বা কোন কোর্তা বা লুঙ্গি দিয়ে ঢাকুক।
হযরত মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহ. তাঁর রচিত আবূ দাঊদ শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ বযলুল মাজহুদে উল্লেখ করেন, হাদীসে উদ্দেশ্য হল, ঐ পোষাক যা উপর থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে পরিধান করা হয়। যদি নিচের দিক থেকে উপরের দিকে উঠে আসা কোন পোষাক দ্বারা যদি টাখনু ঢেকে যায় তাহলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। যেমন, মোজা। মোজা পরিধানের দ্বারা টাখনু ঢাকলে কোন সমস্যা নেই। বরং ঠাণ্ডা থেকে পা রক্ষার উদ্দেশ্যে মোজা পরিধান করলে সওয়াব পাওয়া যাবে। মোটকথা উপর থেকে যে পোষাক নিচের দিকে ঝুলে থাকে তা দিয়ে টাখনু ঢাকা যাবে না।
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বুখারী শরীফের সুপ্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারী-তে লিখেন, চার কারণে টাখনু ঢেকে পোষাক পরিধান করা হারাম-
এক. من جهة التشبه بالنساء এতে নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়।
দুই. من جهة التلوث بالنجاسة এতে কাপড়ের নিচের অংশে নাপাকি লাগে।
তিন. من جهة التشبه بوضع المتكبرين অহঙ্কারীদের স্বভাবের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়।
চার. من جهة الاسراف অতিরিক্ত অংশের পিছনে অনর্থক অর্থ ব্যয় হয়।
কেউ হয়তো বলতে পারে, টাখনুর নিচে যে অংশটুকু ঝুলে থাকে তার জন্য আর কতটুকু অর্থ ব্যয় হয়? এ আধা ইঞ্চি বাড়তি কাপড়ের জন্য যা ব্যয় হয় তা কি অনর্থক ব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত?!
বলব, আল্লাহর এ বিধান সমগ্র মুসলিম জাতির সম্মুখে পেশ করুন। যদি বিশ্বব্যাপী ৯০ কোটি মুসলমান বসবাস করে থাকে তাহলে হিসেব করুন কত কোটি ইঞ্চি কাপড় অপচয় হচ্ছে। এ কোটি ইঞ্চিকে ফিট ও গজে রূপান্তর করে হিসেব করে দেখুন কত কাপড় অপচয় হচ্ছে!
শুনে রাখুন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নির্দেশ প্রদান করলেন, তখন শুধুমাত্র মুনাফিকরাই টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করত। কোন সাহাবীর ব্যাপারে একথার প্রমাণ নেই, তিনি টাখনু ঢেকে পায়জামা বা লুঙ্গি পরিধান করেছেন। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তো ফাতহুল বারী-তে উল্লেখ করেছেন, এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরয করল, يا رسول الله إني حمش الساقين ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পায়ের নলা শুকিয়ে গেছে। রোগা হয়ে গেছে। আমাকে এ নির্দেশের আওতামুক্ত করে দিন। আমি টাখনু ঢেকে রাখলে আমার এ দোষ মানুষের দৃষ্টিগোচর হবে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শোন, রোগ তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে। আর গোনাহ তো হবে তোমার পক্ষ থেকে। আমার মাঝে তোমার জন্য কোন অনুসরণীয় আদর্শ দেখতে পাও না। আমার লুঙ্গি কত উপরে থাকে দেখেছো।
যারা টাখনু ঢেকে কাপড় পরিধান করে তাদের চার প্রকার শাস্তি হবে-
০১. لا يكلمهم الله يوم القيامة আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না।
০২. ولا ينظر إليهم তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেবেন না।
০৩. ولا يزكيهم তাদেরকে সংশোধনের তাওফিক দিবেন না।
০৪. ولهم عذاب أليم তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রদান করা হবে।
মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহ. লিখেন, এ শাস্তি হবে যদি তওবা না করে। তওবা করে নিলে এ শাস্তি থেকে নাজাত পাবে।
প্রিয় বন্ধুগণ! দৃষ্টি যেন কেবল আসমানের দিকেই না থাকে, জমিনের দিকেও দৃষ্টি দিন। খেয়াল রাখুন, আমার টাখনু আবার কাপড়ে ঢেকে গেল না তো।
এখন কেউ যদি বলে, এ নির্দেশ তো কুরআনে নেই। তাকে বলব, আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে বলেছেন, আমার নবী যা নির্দেশ করেন তা আমার নির্দেশ মনে করবে। কুরআনে ইরশাদ করা হয়েছে,
وَمَاۤ اٰتٰىكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهٰىكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا
অর্থাৎ আমার নবী যে নির্দেশ প্রদান করে তা পালন কর আর যা নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক। সূরা হাশর : ০৭
এটা কুরআনে কারীমের আয়াত। অতএব হাদীস মেনে চলা মানে স্বয়ং কুরআনকেই মেনে চলা। আর হাদীস অমান্য করা মানে কুরআনকেই অমান্য করা।
খাযায়েনে হাদীস থেকে অনুবাদ, আব্দুল মুমিন
 
Top